জাহাঙ্গীর আলম, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি: পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় আদা চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের চাষিরা। বাড়ির আঙিনা, ছাদ, অনাবাদি ও বাগানের ভেতর পতিত জমিসহ বিভিন্ন জায়গায় বস্তায় মাটি ভরে কিংবা টবে আদা চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন গ্রামের অসহায় ও সাধারণ কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক তত্বাবধানে কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা এই মসলা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। মসলা এবং ভেষজ ওষুধ হিসেবে আদার ব্যবহার ও এর দাম বেশি হওয়ায় পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভাবে বাড়তি লাভের আশায় বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন অনেকে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাণীশংকৈল উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৪৫ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন কৃষকরা । সফলতা পেলে ভবিষ্যতে এভাবে আদার চাষের পরিধি আরো বাড়বে।
উপজেলার ধর্মগড়,নন্দুয়ার,বাচোর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখে গেছে কৃষকরা বাড়ির আশপাশে বস্তায় আদার চাষ করেছেন।
এদের মধ্যে বাচোর ইউনিয়নের ভাংবাড়ি গ্রামের কৃষক ওসমান গনি বাড়ির পাশে পতিত জায়গায় সাড়িবদ্ধভাবে ৩০ হাজার ,ধর্মগড় ইউনিয়নের কাউন্সিল বাজার এলাকার কৃষক আহসান হাবীব শান্ত ৫ হাজার, নন্দুয়ার ইউনিয়নের ভন্ড গ্রাম এলাকার কৃষক দুলাল হোসেন ৪ হাজার বস্তায় বানিজ্যিক ভাবে আদা চাষ করেছেন। এছাড়াও অনেকেই ঘরে ঘরে ৬ হাজার বস্তায় আদা চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন এই উপজেলায়।
কৃষক ওসমান গনি জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় ৩০ হাজার বস্তায় বানিজ্যিক ভাবে আদা চাষ করেছি। প্রতি বস্তায় এক কেজি করে আদা পেলে প্রায় ৩০ টন আদা উৎপাদন হবে বলে জানান তিনি।অতি অল্প খরচ ও অধিক লাভজনক পদ্ধতি এই বস্তায় আদা চাষ প্রকল্প। এতে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন,আদা চাষে আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না। বস্তা স্থানান্তর করা যায় বলে অতিবৃষ্টি বা বন্যার পানি জমে ফসল নষ্ট হয় না। রোগের আক্রমনও কম হয়। বাড়ির আশপাশের পরিত্যক্ত ও ছায়া যুক্ত জায়গা কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয় করা যায় আদা চাষ করে।
বস্তায় আদার চাষ বিষয়ে কৃষক আহসান হাবীব শান্ত জানান, বস্তায় আদা লাগানোর কয়েকদিনের মধ্যে চারা বের হয়ে দ্রুত বেড়ে উঠছে আদা গাছগুলো। বাড়ির পরিত্যক্ত জমি কাজে লাগিয়ে লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছি আমি। সাড়িবদ্ধভাবে বস্তায় সবুজ আদা গাছ দেখতে এসে অনেকে মুগ্ধ হচ্ছেন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রওসুল আযম পলাশ জানান, মাটির সঙ্গে গোবর সার, খৈল, ছাই সহ রাসায়নিক সার মিশিয়ে বস্তা ভরে কৃষকরা পতিত জমিকে কাজে লাগিয়ে বস্তায় আদার চাষ করেছেন। এজন্য তাদেরকে সর্বক্ষনিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। অল্প খরচে অধিক লাভজনক পদ্ধতি এটি।
রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, বস্তায় আদা চাষ করলে বাড়তি ফসলি জমির প্রয়োজন হয় না। বস্তার মাটি নিয়ন্ত্রন করা সহজ হয়। আমরা কৃষককে আদা চাষে উদ্ধুদ্ধ করছি এবং সহায়তা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে বস্তায় আদার চাষ করে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কৃষক বাড়তি আয়ও করতে পারে। চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় ৪৫ হাজার বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। আগামীতে এর পরিধি আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।