বাংলার আলো ডেস্ক: নিজেদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্টের ক্ষমতা পরিবর্তন এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য জয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে ইউরোপীয় দেশগুলের জোট ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)।
ইউরোপের এক ডজনেরও বেশি রাজনীতিক, কূটনীতিক ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট।
অবশ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে এসব রাজনীতিক, কূটনীতিক এবং নীতি-নির্ধারকরা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের সম্ভাব্য বিজয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা সৃষ্টি করবে না। কারণ এর আগে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ট্রাম্প, সে সময় তাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে ইইউ নেতাদের। ফলে যেহেতু ট্রাম্পের চিন্তা-ভাবনা, রাজনৈতিক দর্শন প্রভৃতি তাদের কাছে অপরিচিত নয়, তাই ক্ষমতার পালাবদলে এবার যদি ট্রাম্প জয়ী হন—তাহলেও যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ সম্পর্কে তার তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।
জার্মানির প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী মাইকেল স্টেম্পফ্লি ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, “একটা ব্যাপার আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই। ইউরোপ কিন্তু মোটেও হতবুদ্ধি অবস্থায় নেই। আমরা খুব ভালো করেই জানি যে যে ই ক্ষমতায় আসুক, তার জন্য আগামী দিনগুলোতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চল। ইউরোপের জন্যও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এই অঞ্চলটি।”
তবে দুশ্চিন্তার কারণ যে একেবারেই নেই— এমন নয়। কারণ আগের বার যখন দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ট্রাম্প, সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় মিত্রদের জোট ন্যাটোর সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক বেশ তিক্ত হয়ে পড়েছিল। তিক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে এক পর্যায়ে ট্রাম্প ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন।
নির্বাচনে জিতে যদি তিনি সত্যিই ক্ষমতা গ্রহণ করেন, সেক্ষেত্রে ফের এমন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ ২০২১ সালে জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হওয়ার পর গত চার বছরে তিনি
নিজের রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনায় পরিবর্তন এনেছেন— এমন কোনো আলামত এখনও স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়নি।
জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক পার্লামেন্টারি কমিটির চেয়ারম্যান টমাস এরনডিল ওয়াশিংটন পোস্টকে এ প্রসঙ্গে বলেন, “প্রকৃতপক্ষে জো বাইডেন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের শেষ প্রেসিডেন্ট, যিনি নিজেকে সত্যিকার অর্থেই আটলান্টিক অঞ্চলের বাসিন্দা মনে করতেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্টের যেসব বৈশিষ্ট থাকা উচিত, সেসব তার মধ্যে রয়েছে।”
“এখন যেহেতু তিনি নেই, তাই (যুক্তরাষ্ট্রে) যেই আসুক তাতে এই শূন্যতা পূরণ হবে না। আমাদের উচিত হবে আরও বেশি দায়িত্বশীল হয়ে ওঠা, বিশেষ করে নিরাপত্তার প্রশ্নে।”
ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্কেও আঘাত আসতে পারে। কারণ গতবার যখন ক্ষমতায় ছিলেন, ইউরোপের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছিলেন তিনি। এবারও তেমন কিছু হওয়ার আশঙ্কা অমূলক নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক বলেছেন, “সম্ভবত সামনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাণিজ্যিক সম্পর্কে ফের আঘাত আসবে। এবার এই আঘাত সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি আমাদের থাকবে।”