আটোয়ারিতে ব্যবসায়ীর স্ত্রী-দুই ছেলেকে হত্যা, মূলহোতা গ্রেপ্তার

পঞ্চগড় প্রতিনিধি: বৃহস্পতিবার দুপুরে তিন খুনের রহস্য উদঘাটনসহ মূলহোতাকে গ্রেপ্তারের তথ্যটি জেলা পুলিশ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানান পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা।

পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে মা ও দুই ছেলেকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার মূলহোতাকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনীর বিশেষ টিম। বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে নবিন ইসলাম (২৩) নামের ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে সেনাবাহিনী।

পুলিশ সুপার বলেন, বোদা বাজারের সায়হাম ক্লথ স্টোর নামে কাপড়ের ব্যবসা রয়েছে সাদ সেলিমের (৪২)। তিনি আটোয়ারীর কুড়লিয়া (দলুয়া) এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে। প্রতিদিনের মতো দোকান বন্ধ করে বুধবার রাত সোয়া ১১টার দিকে বাড়িতে যান সেলিম। বাড়ির আঙিনায় প্রবেশ করেই মেইন গেট খোলা দেখে দ্রুত বাসায় ঢুকে দেখেন ডাইনিংয়ের মেঝেতে রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে রয়েছে স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৩২), বড় ছেলে সৈকত শেখ (১৪) ও ছোট ছেলে সায়হাম শেখ (৮)। এমন দৃশ্য দেখে চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। পরে ৯৯৯-এ সংবাদ দিলে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে আটোয়ারী থানা পুলিশ, সিআইডির ক্রাইম সিন ম্যানেজমেন্ট টিম। পরে সেনাবাহিনীও উপস্থিত হয়। রাত ৩টার দিকে মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মূলহোতার নাম জানতে পারে আটোয়ারী থানা পুলিশের একটি চৌকস দল। হত্যার সঙ্গে জড়িত আর কেউ নন, প্রতিবেশী নবিন ইসলাম জাহিদ (২২)। তিনি একই উপজেলার পশ্চিম সাতখামার এলাকার ফজলার রহমানের ছেলে।

পরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ কুড়ুলিয়া (দলুয়া) এলাকার দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা নবিন ইসলাম জাহিদকে গ্রেপ্তার করে। তাকে গ্রেপ্তারের পর জানা যায় ঘটনার সময় বাম হাতের তালু কেটে গেলে নবিন প্রথমে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরবর্তীতে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।

গ্রেপ্তারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদকালে হত্যার দায় স্বীকার করে। সে জানায় তার এ কাজের সঙ্গে আরও তিনজন জড়িত। তারা হলেন- সাজ্জাদুর রহমান বাধন (২৭), রিমন ইসলাম (৩০) ও রিফাত (৩২)। এদের মধ্যে সাজাদ্দুর রহমান বাধন ইসলামবাগ (মোসলেমপুর) এলাকার শফিউর রহমানের ছেলে, রিমন ইসলাম নগরকুমারী এলাকার নওশাদ আলীর ছেলে ও রিফাত ইসলামবাগ (কলেজপাড়া) এলাকার সলিম উদ্দীনের ছেলে। তারা পলাতক রয়েছেন।

পূর্বশত্রুতার জের ধরে গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভুক্তভোগী কাপড় ব্যবসায়ী সেলিমের বাড়িতে তারা ঢুকে তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে ধারালো ছুরি ও বটি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। পরে হত্যাকাণ্ডের কাজে ব্যবহৃত ছুরি ও বটি বাড়ির পেছনের বাঁশঝাড়ে ফেলা হয় মর্মে স্বীকার করে নবিন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাড়ির পেছনে আজিজুল ইসলামের বাঁশঝাড় থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার করে জব্দ করে পুলিশ।

পূর্বশত্রুতার কারণ হিসেবে পুলিশ সুপার বলেন, কাপড় ব্যবসায়ী সেলিম শেখের বাড়ির পূর্বপাশে একটি মুরগির খামার রয়েছে। সেই খামারে কাজ করতেন হত্যায় জড়িত চারজন। নানা অনিয়ম ও মুরগির খাবার চুরি করার কারণে তাদেরকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে সেলিমের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হলে বিরোধ সৃষ্টি হয়। কিছুদিন আগেও সেলিমের সঙ্গে নবিনের (যাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি) তর্কাতর্কি হয়। এর জের ধরেই বুধবার রাতে তারা পরিকল্পনা করে সেলিমের বাড়িতে যায়। সেলিমকে না পেয়ে তার স্ত্রী ও দুই ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *