ইকবাল বাহার, পঞ্চগড় প্রতিনিধি: মানসিক প্রতিবন্ধী আব্দুর রাজ্জাক (১৯) দাঁড়িয়েছিলো বাড়ির সামনের সড়কে। হঠাৎ ডিবি পরিচয়ে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায় তাকে। এরপর মাদক মামলায় তাকে পাঠানো হয় জেলে। বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিলেও আটকের স্থান দেখানো হয় প্রায় দুই কিলোমিটার দুরের একটি স্থান। আটকের পর উৎকোচ না পেয়ে ডিবি পুলিশ এমন নাটক সাজিয়েছে দাবি পরিবারের।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের পাইকানিপাড়ায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে এসব বলেন আব্দুর রাজ্জাকের পরিবারের লোকজন।
আব্দুর রাজ্জাক ওই এলাকার ইমান আলীর ছেলে। সে একদিকে মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী, অপরদিকে মৃগিরোগে আক্রান্ত। দীর্ঘদিন ধরেই তার চিকিৎসা চলছে। প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি ভাতা ভোগিও সে।
পরিবারের অভিযোগ, গত মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে বাড়ির সামনের পাকা সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলো আব্দুর রাজ্জাক। স্থানীয়দের সামনে থেকেই তাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয় কয়েকজন লোক। এরপর এখান থেকে দুই কিলোমিটার দুরের খালপাড়া নামক এলাকায় নিয়ে তাকে মারধর করা হয়। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে। পরে সাজানো হয় মিথ্যা মাদক মামলা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আব্দুর রাজ্জাককে আটকের পরই পঞ্চগড় ডিবি পুলিশের এসআই মিজানুর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় একটি এজহার দায়ের করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন- আব্দুর রাজ্জাককে পঞ্চগড়-হাড়িভাসা সড়কের খালপাড়া থেকে আটক করা হয়েছে। এসময় তার কাছে ৮৯ পিস নেশাজাতীয় মাদকদ্রব্য টেপেন্টাডল ট্যাবলেট পাওয়া যায়। মামলায় আব্দুর রাজ্জাকের বড় ভাই আল আমিনকেও আসামী করা হয়।
আব্দুর রাজ্জাকের বাবা ইমান আলি বলেন, আমার প্রতিবন্ধী ছেলেকে আটকের কারণ জানতে আমি ডিবি কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে একজন আমার ছেলেকে ছেড়ে দেয়ার শর্তে আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি দিতে পারিনি, তাই তারা মাদক মামলায় হাজতে পাঠিয়েছে আমার ছেলেকে।
আব্দুর রাজ্জাকের মা রওশনআরা কান্নাজড়িক কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে একা কোথায় যেতে পারেনা। সে অসুস্থ, আমরা তার চিকিৎসার সব কাগজ পুলিশকে দেখিয়েছি তারপরও পুলিশ ছাড়লোনা।
স্থানীয় জসিম, তারামিয়া, ফয়জউদ্দীন বলেন, ওই ছেলের মাথার সমস্যা। কখনো সিগারেট খেতেও দেখিনি। তাকে তুলে নিলো আমাদের সামনে থেকে, আর মামলায় দেখালো দুই কিলোমিটার দুরের স্থান। ডিবি পুলিশের এমন মিথ্যাচারের নিন্দা জানাই।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ডিবি পুলিশের এসআই মিজানুর রহমান বলেন, মূলত তারা দুইভাই ছিলো, আমরা একজনকে ধরতে পেরেছি। আর জায়গাটা বড় বিষয়না, সেখানে পুলিশের সঙ্গে তার ধস্তাধস্তিও হয়েছে। আমরাও তার চিকিৎসার কাগজগুলো দেখেছি, মানসিক সমস্যার কাগজ পাইনি।