অর্থ পাচার রোধে কঠোর বার্তা


বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের কঠোর বার্তা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ পাচারে জড়িতদের নামের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনতে সংশ্লিষ্ট দেশের আইন পর্যালোচনার পাশাপাশি বিদ্যমান আইনগুলো খতিয়ে দেখতেও বলেছেন তিনি। দেশে যাতে নতুন করে কালোটাকার জন্ম না হয়, সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা। বুধবার এক বৈঠকে এসব নির্দেশনা দেন তিনি। এদিকে প্রথম কার্যদিবসে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেছেন, অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেছেন, যারা টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত-সুনির্দিষ্ট অনুসন্ধানের মাধ্যমে তাদের বের করতে হবে। এছাড়া তাদের অনিয়মে যারা সহায়তা করেছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। অর্থ পাচার নিয়ে অতীতে অনেক আলোচনা হলেও বাস্থবে পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালনের খবরও বেরিয়েছে।

সম্প্রতি এক খবরে প্রকাশ-বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) অর্থ পাচার ঠেকানোর দায়িত্বে থাকলেও উলটো সংস্থারটিরই ঊর্ধ্বতন কতিপয় সদস্য পাচারকারীদের সহায়তা করেছে। জানা গেছে, সংস্থাটির এক সদ্য পদত্যাগী অর্থ পাচারের সবকটি দরজা দুর্নীতিবাজদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায় দেশ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার হয়ে গেছে। রাজনৈতিক পালাবদলের এ প্রেক্ষাপটে কেউ যাতে অর্থ তুলে নিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে, তা প্রতিরোধে সন্দেহভাজনদের ব্যাংক হিসাব জব্দকরণসহ বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। আশার কথা, বুধবারের বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা এসব বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন।

আমরা মনে করি, অর্থ পাচারকারীদের যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে থাকে, তাদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যত ক্ষমতাশালীই হোক না কেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। যেসব প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচার হয়ে থাকে, সেগুলো চিহ্নিত করে তার ফাঁকফোকর বন্ধ করাও প্রয়োজন। বস্থুত অর্থ পাচার রোধ করতে হলে দুর্নীতি রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সব ধরনের আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থ পাচার ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া দরকার। তা না হলে এ বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে কিনা সন্দেহ। বাংলাদেশ ব্যাংক, বিশেষত বিএফআইইউকে এ বিষয়ে বিশেষভাবে সক্রিয় হতে হবে। পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকেও উদ্যোগী হতে হবে সক্রিয় হতে হবে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগকেও। যেহেতু অর্থ পাচারের সঙ্গে হুন্ডির বিষয়টি সরাসরি জড়িত, সেহেতু হুন্ডি বন্ধেও নিতে হবে পদক্ষেপ।

নানা উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও প্রবাসীরা কেন বৈধ চ্যানেলে অর্থ প্রেরণে উৎসাহী হচ্ছেন না, তা খুঁজে বের করতে হবে। অর্থ পাচারকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা না হলে এ খাতে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে কিনা, এ বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে অর্থ পাচার রোধে যা যা করা দরকার, তার সবই করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *