ঢাকা, ১৬ জুলাই ২০২৪: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কোটা আন্দোলনের নামে যারা রাজাকারের পক্ষে শ্লোগানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের বিরূদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ১৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সমসাময়িক প্রসঙ্গে তিনি একথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী যখন আন্দোলন শুরু করে, তখন সেখানে বিএনপি-জামাত তাদের ‘প্ল্যান্টেড’ লোক ঢুকিয়ে দিয়েছে এবং কোটাবিরোধী আন্দোলনকে রাষ্ট্রবিরোধী, সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা করছে। সেই কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজাকারের পক্ষে শ্লোগান এসেছে।
তিনি বলেন, যারা এই আন্দোলন করছে, তারা দেশের সংবিধান মানতে চায় না। দেশের অনগ্রসর গোষ্ঠীকে রাষ্ট্রের কার্যক্রমে যুক্ত করার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি সংবিধানে আছে।
কোটার বিষয়টি এখন আদালতের এখতিয়ারভুক্ত উল্লেখ করে মন্ত্রী হাছান বলেন, সরকার শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে কোটাপদ্ধতি বাতিলের যে প্রজ্ঞাপন দিয়েছিল, একজন ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হয়ে মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সেটি বাতিল করেছিল, সুপ্রিম কোর্ট আবার সেটির ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ এটি আদালতে বিচারাধীন বিষয়। এটি নিয়ে সরকার কিছু করতে গেলে আদালত অবমাননা হবে, সংবিধানবিরোধী হবে।
‘এটি বুঝেও বিএনপি-জামাতের প্ল্যান্টেড যারা, তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুল বোঝাচ্ছে, আবেগ-অনুভূতিকে ব্যবহার করে সরকারের বিরূদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরূদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছে এমন কি জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরূদ্ধেও অপপ্রচার চালাচ্ছে’ বলেন তিনি।
জননেত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক চীন সফর থেকে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে কোটা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জননেত্রী স্পষ্ট বলেছেন, বিষয়টি যখন আদালতে বিচারাধীন, তখন এ বিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই। আদালত যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সরকার সেই মোতাবেক কাজ করবে।
হাছান বলেন, এটি বুঝেও ঔদ্ধত্যপূর্ণ শ্লোগান, আন্দোলন এগুলো আদালত অবমাননার শামিল, সংবিধানের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বেদীমূলে চপেটাঘাত। সুতরাং যারা রাজাকারের পক্ষে শ্লোগানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে, আইন-আদালতের মর্যাদা রক্ষার্থে এদের বিরূদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
পাশাপাশি তিনি জানান, আজ নারী শিক্ষার্থীরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছে নারী কোটা রক্ষার জন্য, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা দাঁড়িয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটার জন্য, চাকমা-মারমাসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীও তাদের কোটার জন্য দাঁড়িয়েছে।
এ সময় আওয়ামী লীগকে দেশ পাহারা দিতে হবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা নির্বাচন ভন্ডুল করতে চেয়েছিল, সেটি না পেরে কখনো কোটা, কখনো তেল-গ্যাসের মধ্যে ঢুকছে। আর আমরা নির্বাচনের আগে রাজপথে থেকেছি, জয়লাভ করেছি বলে ঘরে বসে থাকা নয়, এখন দেশ পাহারা দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, দেশবিরোধী অপশক্তি যখন দেশের বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তরুণদেরকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বেদীমূলে আঘাত হানার চেষ্টা করছে, তাদের রুখে দিতে রাজপথে থাকতে হবে, দেশ পাহারা দিতে হবে।
‘গণতন্ত্রের মুক্তি আন্দোলনে শেখ হাসিনাই একমাত্র প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর’
এর আগে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সরকার দুর্নীতির বিরূদ্ধে শ্লোগান দিয়ে ক্ষমতা দখল করার সময় ক্ষমতায় ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু তারা বেগম জিয়াকে প্রথমে গ্রেফতার করেনি। গ্রেফতার করেছে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। কারণ অন্যায়-দুর্নীতির বিরূদ্ধে এবং গণতন্ত্রের মুক্তি আন্দোলনে শেখ হাসিনাই একমাত্র প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর।
তিনি বলেন, ২০০৭ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওয়ান-ইলেভেনের সরকার দুর্নীতির বিরূদ্ধে শ্লোগান দিয়ে ক্ষমতা দখল করলেও যখন দেখা গেল তারা নিজেরাই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে, দেশে অন্যায় হচ্ছে, স্বামীর অপরাধে প্রসূতি স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, পিতার অপরাধে কন্যাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, গণতন্ত্রকে হরণ করা হয়েছে, তখন জননেত্রী শেখ হাসিনা এর প্রতিবাদ করেছিলেন।
ড. হাছান বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সরকার ছিল বেসামরিক লেবাসে প্রকৃতপক্ষে সামরিক শাসন। আর যারা সেই সরকারের বিভিন্ন পদে আসীন হয়েছিলেন, তারা ছিলেন ভাড়াটিয়া, তারা সেনাসমর্থিত সরকারের ভাড়া খাটতে গিয়েছিলেন। এ ধরনের অনেক লোক আছেন, যারা সুযোগের অপেক্ষায় ওঁৎ পেতে বসে থাকেন, কখন ভাড়ায় খাটবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সরকার যেহেতু গণতন্ত্রের পায়ে শেকল পরিয়েছিল, তাই গণতন্ত্রের মুক্তি আন্দোলনের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যাকেই প্রথমে গ্রেফতার করেছিল এবং এমন নির্জন কক্ষে রাখা হয়েছিল যে জননেত্রী শেখ হাসিনা বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন এবং তাকে হাসপাতালে বা আদালতে নেওয়ার সময় ছাড়া আমাদের এক নজত দেখার আর সুযোগ ছিল না।
হাছান মাহমুদ স্মরণ করিয়ে দেন, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের পর আমাদের কর্মীরা যেভাবে আন্দোলন করেছে, তাতে বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়াও মুক্তি পেয়েছিলেন। আর শেখ হাসিনার কারাবন্দি সময়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান দলকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচিয়ে ঐক্যবদ্ধ রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছেন।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমেদ এমপি’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঞ্চালনায় সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি সম্মানিত অতিথি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বিশেষ অতিথি ও ঢাকা ১৯ আসনের এমপি মো: সাইফুল ইসলাম আমন্ত্রিত বক্তার বক্তব্য রাখেন।